পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের মানুষের সুরক্ষার জন্য বন্যানিয়ন্ত্রন বাঁধ না থাকায় এখানকার ১২-১৩টি গ্রাম পানি বন্ধি।বাড়ির উঠোনে পানি, ঘরের ভিতরে পানি। গ্রামীণ মেঠোপথ, কৃষি জমি পানিতে তলিয়ে আছে। এক কথায় জোয়ারের পানিতে ভাসছে পুরো গ্রাম।বিয়েতে গায়ে হলুদ একটি চিরাচরিত রীতি।
কিন্তু করোনার সময় সবকিছু বন্ধ থাকলেও ঘরোয়াভাবে বিয়ের আয়োজন ঠিকই হয়েছে।ঠিক তেমনি বন্যার এই সময়ও রীতিমতো ভাঁটা পড়েনি বিয়ের মতো সামাজিক এই রীতিতে। তা যদি হয় হাঁটু পানিতে তাহলে তার চিত্র কেমন হবে ভাবুন তো এমনই এক ভিডিও সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।বন্যা কবলিত লালুয়া ইউনিয়নের একটি এলাকায় প্রায় হাঁটু সমান পানিতে চেয়ারে বসে আছে বর ও কনে।
আর তাদের ঘিরে রয়েছে আত্নীয়স্বজন ও উৎসুক মানুষজন। তাদের অনেকেই হলুদের ছোঁয়া দিচ্ছেন বর ও কনেকে। এই অবস্থায় তাদের ঘিরে আনন্দমুখর একটি পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লালুয়া ইউনিয়ন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মহিউদ্দিন ফকির গত মাসের ২৯ জুলাই বিয়ে করেন। তাঁর শশুরবাড়ি রাঙ্গাবালী উপজেলার বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের গাববুনিয়া গ্রামে।
গত ২০ আগষ্ট তিনি নববধূকে নিজ বাড়িতে তুলে আনেন। ২২ আগষ্ট দুপুরে জোয়ারের পানির মধ্যে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করা হয়। জোয়ারের পানিতে চারদিক যখন থৈ থৈ করছে, তখন তাঁর বাড়ির উঠোনে চেয়ার পেতে বর-কনেকে হলুদ দেয়া হয়। এতে নিকট আত্মীয়স্বজনরা অংশ নেন।জোয়ারের পানির মধ্যে ব্যতিক্রমী হলুদ দেয়ার আয়োজনকে সবার কাছে আকৃষ্ট করেছে।
এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাশ করা শিক্ষার্থী মোঃ ইব্রাহিম খলিল। তাঁর মন্তব্য ছিল, আমাদের সুখ-শান্তি কিছুই নাই। একটি জনপদ সব সময় পানিতে ডুবে থাকে, আর তা নিয়ে কারও মাথা ব্যাথা নেই। এটা হতে পারে? জীবনকে তো থামিয়ে রাখা যাবেনা। জীবন চলবেই। যার কারণে এরকম একটি আয়োজন করতে হয়েছে। এটা সুখের সাথে কষ্টের চিত্র বহন করে।
মহিউদ্দিনের বাবা আবদুল বারেক ফকির বলেন,কী করমু কন? ঘরে পানি, বাইরে পানি। নাইম্যা কোথাও যে যামু, হেই পরিস্থিতি নাই। বাধ্য হইয়াই বাড়ির উডানে হলুদের আয়োজন করতে হইছে। তয় মনডায় শান্তি পাই নাই। আত্মীয়স্বজন কাউকেই দাওয়াত করতে পারি নাই।তিনি আরও বলেন, গ্রামের মানুষ রান্না কইর্যা খাইবে, হেই পরিস্থিতিডা পর্যন্ত নাই। গ্রামের মানুষ বর্ষার পানি ধইর্যা রাইখ্যা,কোনো কোনো সময় দুরে গোনে পানি আইন্যা রান্নার কাজ করে। একটা কষ্টের জীবন আমরা পার করছি।